বিখ্যাত সর্বশেষ বাণীসমূহ
আমাদের দেশের একটি অতি প্রচলিত কথা, বিখ্যাত সর্বশেষ বাণীসমূহ, সাধারণত একটি সন্দিহান পদ্ধতিতে বলে থাকে, আমাদেরকে সতর্ক করে নিজেদের শ্বাস রোধ করে রাখার জন্য এবং অপেক্ষা করতে বলে যে নির্দিষ্ট কিছু দুর্যোগ ঘটতে পারে তার জন্য। কিন্তু বহু নর ও নারী, এটাকেই জীবন হিসেবে মেনে নিয়ে এই তীর্থযাত্রার পরিব্রাজক হন, এর পরিপূর্ণ অবস্থায় এসে পৌঁছান, মৃত্যুকে পরাজিত করে এবং অনন্তের মুখোমুখি হয়ে, অনেক আকর্ষণীয় সর্বশেষ বাণীসমূহ রেখে গেছেন। তার মধ্য থেকে কিছু কিছু আনন্দঘন উল্লাসের মধ্যে ব্যক্ত করা হয়েছে, অন্যান্যসমূহ আতঙ্কগ্রস্ত ভয়াবহতার সাথে উচ্চারিত হয়েছে যেন সেই ভয়ানক ফলাফল তার নিজের জন্যই ধেয়ে আসছে।
মৃত্যু! যা আমাদের পরিকল্পনা, ইচ্ছা, অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য, দর্শন, চিন্তাভাবনার নিদর্শন ইত্যাদির অবশ্যম্ভাবী পরিসমাপ্তি। এটি আবালবৃদ্ধ, ধনী এবং দরিদ্র, বন্দী এবং মুক্ত, রাজা এবং রাজকুমার, রাস্তার কাঙাল সকলের ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে।
“এটি বিলাপ করার একটি বিষয় যে মানুষ জানে না যে এই বিশ্বে কোন সমাপ্তির জন্য সে জন্মগ্রহণ করেছে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এর থেকে বের হয়ে যেতে প্রস্তুত না হচ্ছে।”
বিখ্যাত সর্বশেষ বাণীসমূহের এই সংকলন লেখা হয় পাঠককে মৃত্যুর পর জীবনের নিশ্চয়তা সম্পর্কে সন্তুষ্ট করতে, এবং কিভাবে শাশ্বত জীবন ঈশ্বরের পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মধ্যে প্রাপ্ত করা যাবে জানাতে। যখন আপনার মৃত্যুর পালা আসবে, আপনি কি ভয় পাবেন, অথবা আপনি স্যালভেশন আর্মির প্রতিষ্ঠাতা, জেনারেল উইলিয়াম বুথ এর স্ত্রী, ক্যাথরিন বুথ এর সর্বশেষ বাণীসমূহ উচ্চারণ করবেনঃ
“জলের যেমন বৃদ্ধি ঘটে, আমারও ঠিক তেমনই। আমি তলিয়ে যাব না, বরঞ্চ ক্রমশ উর্দ্ধে উঠবো। মৃত্যু সম্পর্কে উদ্বিগ্ন না হয়ে ভালভাবে বেঁচে থাকব, মৃত্যু যথার্থ হতে হবে।”
আপনার কি একজন রাজা, রাষ্ট্রপতি, অথবা মহান রাজনৈতিক নেতা হওয়ার আকাঙ্খা হয়? 1715 সালে ফ্রান্সের রাজা, চতুর্দশ লুই এর তাঁর পুত্রকে বলা বিদায়কালীন বাণীসমূহ বিবেচনা করুনঃ
“আমার পুত্র, আমার ত্রুটির দ্বারা অর্জিত, একটি উন্নততর জীবন হতে পারত; এবং স্মরণে রেখো এই রাজাগণ অন্যান্য মানুষদের মতনই মারা যায়”
রাজা অন্যান্য মানুষদের মতনই মারা যান!
সেভেরাস (146-211), তৃতীয় শতকের রোমান সম্রাটের A.D., তাঁর জীবনের আশাহীন সংকলন ছিলঃ
“আমার সবকিছুই আছে, এবং সবকিছু কিছুই নয়। একটি ছোট্ট শবাধার একজনের সমস্ত অবশিষ্ট ধারণ করবে যার জন্য সমগ্র বিশ্ব খুবই তুচ্ছ ছিল।”
খলিফা আব্দ –এর – রহমান Ill (961 A.D.), স্পেনের সুলতান, তাঁর হাতের নাগাল থেকে সুখ হারিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেনঃ
“আমি প্রথম খলিফা হওয়ার পরে থেকে পঞ্চাশ বৎসর অতিক্রম করে গেছে। ঐশর্য, সম্মান, আনন্দ, আমি সবকিছুই উপভোগ করেছি। আপাতভাবে বিদ্যমান এই সুখ উপভোগের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে, আমি গুনে দেখেছি যে এর মধ্যে আমি কেবলমাত্র চৌদ্দ বৎসরই প্রকৃত সুখী হয়েছিলাম!”
কল্পনা কর! একজন শাসক হিসেবে 50 বছরের মধ্যে কেবলমাত্র 14 দিনই সুখে অতিবাহিত হয়েছে।
সম্ভবত আপনি নাস্তিক বা অজ্ঞানবাদী দর্শন অনুসরণ করে চলেছেন। এইসমস্ত লোকেদের অধিকাংশই ঈশ্বরের সম্মুখে তাদের জীবনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চানএই প্রচার করে যে তাঁর কোন অস্তিত্ব নেই। তারা আসলে নিজেদেরকে “স্বেচ্ছাকৃত অজ্ঞ” তৈরি করেছেন যে “প্রভু নির্দেশবাক্য উচ্চারণ করেছিলেন এবং এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল, এবং ঈশ্বরের মুখের নিঃশ্বাস থেকে পৃথিবির সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে।” (Ps 33:6) কোন এক সময় ভলতেয়ার নামে 19 শতকে এইরকম একজন বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক এবং ঘোরতর নাস্তিক ছিলেন। খ্রীষ্ট সম্পর্কে, তিনি একবার বলেছিলেনঃ “নরাধমকে অভিসম্পাত।”
একবার তিনি গর্ব করে বলেছিলেন, “ 20 বছরের মধ্যে খ্রীষ্টধর্ম আর থাকবে না। আমার একার হাতই এটিকে পশ্চাত থেকে বারো জন প্রেরিতকে সঙ্গে নিয়েই ধ্বংস করে দেবে।”
তাঁর অন্তিম ভয়ঙ্কর ছিলঃ “আমি ঈশ্বর এবং মানুষ উভয়ের দ্বারাই পরিত্যক্ত হয়েছি। আমি আপনাকে আমার সম্পত্তির অর্ধেক দিয়ে দেব যদি আপনি আমাকে আরও ছয় মাস জীবন দান করেন, তারপর আমি নরকে যাব এবং আপনি আমাকে অনুসরণ করবেন! খ্রীষ্ট, হে যীশু খ্রীষ্ট!”
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তাঁর অনুগ্রহের দিন অতিত হয়েছিল।
থমাস পাইন একজন বিখ্যাত আমেরিকান দেশভক্ত এবং নাস্তিক ছিলেন যিনি এজ অফ রিজন নামক ধর্ম হীন এবং বাইবেল বিরোধী বই রচনা করেছিলেন। তিনিও সেই একইরকমের ভয়ঙ্কর শেষ দেখেছিলেনঃ
“আমি যেহেতু তাদেরই ছিলাম, কারণ যে এজ অফ রিজন প্রকাশিত হয় নি, বিশ্বজগতকে দিতে হবে। হে ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করুন! খ্রীষ্ট আমাকে সাহায্য করুন! হে ঈশ্বর আমি কি কাজ করেছি যে আমাকে এত কষ্ট ভোগ করতে হবে? কিন্তু সেখানে কোন ঈশ্বর নেই! কিন্তু থাকা উচিত, এরপর আমার কি হবে? ঈশ্বরের দোহাই আমার সাথে থাকুন! আমার সাথে থাকতে এমনকি একটি শিশুকেও পাঠান, কারণ নরকে আমি সম্পূর্ণ একা।যদি সেখানে শয়তানেরও একজন প্রতিনিধি থাকে আমি তার সাথে এক হব।”
এমনকি ঈশ্বরের কিছু বান্দা, এই জীবনের অবসানের উপর, তাদের নিজস্ব জীবনের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন করেছে। থমাস ওলসে, রোমান ক্যাথলিক কার্ডিনাল এবং অষ্টম হেনরির রাজত্বের সময়ের রাষ্ট্রনায়ক, মৃত্যুশয্যায় মন্তব্য করেছিলেনঃ
“যদি আমি ঠিক যতটা নিষ্ঠার সাথে রাজার সেবা করেছিলাম ঠিক ততটাই নিষ্ঠার সাথে ঈশ্বরের সেবা করতাম, তিনি আমাকে আমার এই বার্ধক্যে ত্যাগ করতেন না। কিন্তু এই পুরস্কার অবশ্যই আমাকে শুধুমাত্র আমার যন্ত্রণার পুরস্কার হিসেবেই পেতে হবে এবং জেনেছি যে তাঁকে সেবা করা আমার কতটা জরুরি ছিল, এবং তা ঈশ্বরের প্রতি আমার সেবা সংক্রান্ত ছিল না, তা ছিল রাজাকে আনন্দদানের জন্য সন্তুষ্ট করতে।”
বিখ্যাত ইংরাজি ধর্মতত্ববিদ, ম্যাথু হেনরির সর্বশেষ বাণীসমূহের তুলনাতেঃ
“একটি জীবন যা ঈশ্বরের সেবায়, এবং তাঁর সাথে আলাপনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়, তা হল সর্বাপেক্ষা শান্তির জীবন যা একজন মানুষ এই বর্তমান পৃথিবীতে যাপন করতে পারেন।”
এছাড়াও জনাথন এডওয়ার্ডস, মধ্য অষ্টাদশ শতাব্দীর বিশিষ্ট পুনর্জাগরণবাদী প্রচারক, তার সংখ্যা বৃদ্ধিতে খুব খুশী ছিলেন। তার বিভাজিকা বাণীসমূহঃ “কোথায় আমার কখনও ব্যর্থ না হওয়া বন্ধু যীশু আছেন?”
বিখ্যাত সর্বশেষ বাণীসমূহের একটি তালিকা কয়েকজন শহীদদের বাণী ব্যতীত কক্ষনোই সম্পূর্ণ হত না; খ্রীষ্টের অভিপ্রায়ের জন্য যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সত্য ও সুসমাচার প্রচারের অভিপ্রায়ে নিজেদের জীবন দুর্মূল্য গণনা না করে। পলিকার্প এমনই একজন ছিলেন। এই দ্বিতীয় শতাব্দীর শহীদ, তার শহরের রোমান শাসনকর্তার দ্বারা খ্রীষ্টকে পরিত্যাগ ও অপমান করতে আদিষ্ট হয়ে, এই উত্তর দিয়েছিলেনঃ
“ছিয়াশি বছর ধরে আমি খ্রীষ্টের সেবায় রত আছি, এবং তিনি কক্ষনোই আমার সাথে বিন্দুমাত্র ভুল কিছু করেননি; তাহলে কিভাবে আমি আমার রাজা এবং পরিত্রাতা যীশুর নিন্দা করতে পারি?”
যেখানে শূলদন্ডের সাথে তাঁকে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছিল, তিনি ঈশ্বরের কাছে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য, রক্ষা করার জন্য, এবং তাঁকে শহীদদের সঙ্গের অনুমতি দেওয়ার জন্য, কোন কিছুরই তিনি প্রস্তাব করেননি।
এক শতাব্দী পরে, অ্যানড্রোনিকাস নামে এক ব্যক্তি, চাবুকাহত হওয়ার পরে তাঁর ক্ষতের রক্তে লবন দিয়ে ঘষে দেওয়া হয়েছিল, বন্য পশুদের মুখে নিক্ষিপ্ত করা হয়েছিল এবং তারপর তাকে তরবারির আঘাতে মেরে ফেলা হয়েছিল। তাঁর সর্বশেষ বাণীসমূহঃ
“আপনার সবথেকে খারাপটাই করুন! আমি একজন খ্রিস্টান; খ্রীষ্ট আমার সহায়ক, সমর্থক, এবং এইভাবে সশস্ত্র হয়ে আমি আপনাদের ঈশ্বরের সেবা করব না, না আমি আপনাদের ক্ষমতাকে অথবা আপনাদের মালিক, রাজা 1 কে ভয় পাইঃ আপনি যত শীঘ্র সম্ভব আপনার শাস্তি শুরু করুন, এবং যতদূর পর্যন্ত আপনার প্রতি ব্যবহারের দুর্বুদ্ধি উদ্ভাবন করতে পারেন, এবং শেষ পর্যন্ত আপনি দেখতে পাবেন যে আমি আমার লক্ষ্যভ্রষ্ট হই নি।”
গির্জার এক অত্যাচারীর শেষ হওয়ার সঙ্গে এই তুলনা করুন। স্টিফেন গার্ডিনার, 16 তম শতাব্দীর উইনচেস্টারের বিশপ। তাঁর সময়কার ক্যাথলিক শাসকদের এই রক্তপিপাসু হাতিয়ার মুখের উপর একটি অভিশাপের সঙ্গে একটি মারাত্মক রোগে মারা যানঃ
“আমি পিটারের মতন পাপ করেছি, কিন্তু আমি তার মতন কাঁদবো না।”
পরিশেষে, আমরা খ্রীষ্টের সর্বশেষ বাণীসমূহ পেয়েছি। ক্রুশের ওপর, উৎপীড়নকারীদের সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করে দিয়ে, তিনি বললেনঃ
“পিতা, এদের ক্ষমা করে দিন, এরা জানে না যে এরা কি করছে।”
তাঁর সম্মুখে ক্রুশের উপর চোরের অনুতাপ শ্রবণ করে, তিনি বলেনঃ
“আজ তুমি স্বর্গে আমার সাথে যাবে।”
ঈশ্বরের সমগ্র ইচ্ছা পালন করার পরে, তিনি সাফল্যের আনন্দে চিৎকার করে বললেনঃ
“শেষ হয়েছে”
তাঁর পিতার প্রতি, সম্পূর্ণ আস্থা ও ভালবাসা নিয়ে তিনি উচ্চারণ করলেনঃ
“পিতা, তোমার হাতে আমি আমার আত্মা সমর্পন করছি।”
পাঠক বন্ধু, আপনার সম্পূর্ণ পরিত্রাণের উপায় 2000 বছর আগে সেই অমসৃণ ক্রুশের ওপর কেনা হয়েছিল। কিন্তু কোন অভিমুখে আপনার জীবন অগ্রসর হচ্ছে? যদি আপনি 70, 80, অথবা এমনকি 90 বৎসর পরমায়ু পান, এতে কি লাভ হবে যদি আপনি সমগ্র বিশ্ব সংসার লাভ করেন কিন্তু আপনার নিজের আত্মাকেই হারিয়ে ফেলেন?
যীশু খ্রীষ্ট এখন আপনার হৃদয়কে আকর্ষণ করছেন। আপনি কি আজ আপনার পাপের জন্য অনুতপ্ত হবেন না, এবং তাঁর ইচ্ছার সামনে আপনার জীবন উৎসর্গ করবেন না? আপনি কি তাঁকে বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও আপনার জীবন শাসন করতে দেবেন না? এটাই একমাত্র জীবন যা আপনাকে শান্তি দিতে পারে, কারণ “আমার ঈশ্বর বলেন, দুষ্ট লোকেদের শান্তি নেই।” (যিশাইয় 57:21)
“কারণ ঈশ্বর এই জগতকে এতোই ভালবাসেন যে তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে দিলেন, যেন সেই পুত্রের ওপর যে কেউ বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয়, বরং অনন্ত জীবন লাভ করে।” (যোহন 3:16)
প্রভু আপনাদের ভালবাসেন এবং যারা তাঁর স্মরণে আসেন তিনি তাদেরকে অনন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি দেন।
আপনার জীবন আজই তাঁর সম্মুখে উৎসর্গ করুন!
আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য অনুগ্রহ করে যোগাযোগ করুনঃ contact@sweethourofprayer.net
You can find equivalent English tract @